শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন ঘুরছিল, বাকি দলগুলো অন্তত দুটি করে ম্যাচ খেলে ফেললেও ভারতের ম্যাচ কেন প্রায় এক সপ্তাহ পরে?
সে প্রশ্নের উত্তর মিলল এবার। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনুরোধেই ভারতের ম্যাচ পিছিয়ে দিয়ে সূচি তৈরি করেছে আইসিসি।
বিশ্বকাপের সূচি একটু সময় নিয়ে দেখে থাকলে যে–কারও মাথায় এই প্রশ্ন আসতে বাধ্য। বেশির ভাগ দল যেখানে দুটি করে ম্যাচ খেলে ফেলছে, সেখানে ভারতের বিশ্বকাপ কেন এখনো শুরু হয়নি?
৫ জুন ভারতের প্রথম ম্যাচ, অথচ সেদিনই দক্ষিণ আফ্রিকা খেলে ফেলবে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ। সূচির এমন অসামঞ্জস্যতার কারণ জানা গেল এবার। মূলত, আইপিএলের জন্যই বিশ্বকাপে সবার চেয়ে দেরিতে ম্যাচ খেলছে ভারত।
শুনতে একটু অদ্ভুত শোনালেও কারণ এটিই। আইপিএল শেষ হওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেটাররা যেন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারেন এবং চুক্তিবদ্ধ বিজ্ঞাপনের শুটিং শেষ করতে পারেন, সে কারণেই বিশ্বকাপ শুরুর ৬ দিন পর ভারতের ম্যাচ রাখা হয়েছে।
একটু খোলাসা করে বলা যাক। মূলত, লোধা কমিটির সুপারিশক্রমেই ভারতকে অন্য দলের তুলনায় পরে ম্যাচ খেলার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের আইপিএলে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ওঠার পর তদন্তের কাজে এই লোধা কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
বিচারক আর এম লোধার নেতৃত্বাধীন এই কমিটি তদন্ত শেষে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে একটি সুপারিশমালা পাঠিয়েছিল। সেই সুপারিশমালায় উল্লেখ আছে, আইপিএল শেষ হওয়ার পর পরবর্তী আন্তর্জাতিক সিরিজ বা টুর্নামেন্টের আগে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বাধ্যতামূলকভাবে অন্তত ১৫ দিনের বিশ্রাম দিতে হবে। এ কারণেই বিসিসিআইয়ের অনুরোধক্রমে ভারতের ম্যাচ পেছনে রেখেই বিশ্বকাপের সূচি সাজিয়েছে আইসিসি।
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, আইপিএলের দ্বাদশ আসরের ফাইনাল হয়েছে ১২ মে। সে হিসাবে ২৭ মে, অর্থাৎ বিশ্বকাপ শুরুর আগেই নির্ধারিত ১৫ দিনের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার কথা। তাও কেন ভারতের ম্যাচ এত পরে?
এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে অন্য জায়গায়। প্রতি পাঁচ বছর পরপর ভারতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের বছরে আইপিএলের আয়োজন নিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে বিসিসিআই। যে কারণে ২০০৯ সালের আইপিএল হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়, আর ২০১৪ সালের আইপিএলের একটি অংশ হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
এবারও শুরুতে ভারতের বাইরে আইপিএল আয়োজনের কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঝেই অনুষ্ঠিত হয়েছে আইপিএলের ম্যাচগুলো। সূচি অনুযায়ী আইপিএলের এই আসরের ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল ১৯ মে। পরে নির্বাচনের জন্য এক সপ্তাহ এগিয়ে এনে ১২ মে ফাইনাল হয়। কিন্তু তত দিনে বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত করে ফেলেছে আইসিসি।
যে কারণে ১৯ মে আইপিএলের ফাইনাল হিসেব করেই অন্তত ১৫ দিনের বিরতি দিয়ে ভারতের সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৯ মে থেকে ১৫ দিনের বিরতি করা হয়েছে বলেই ৩ জুনের আগে ইচ্ছে করে ভারতের কোনো ম্যাচ রাখেনি আইসিসি।
কিন্তু বিসিসিআইয়ের অনুরোধে কেন বিশ্বকাপের সূচি নির্ধারণ করবে আইসিসি? এই প্রশ্নের উত্তর পেতেও খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বাণিজ্যিক দিক থেকে আইসিসির কাছে বিসিসিআই হলো ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’। তাদের অনুরোধ কেই-বা ফিরিয়ে দেয়?